শিল্পের সঙ্গে আজীবন সৎ থাকার চেষ্টা করেছি: চঞ্চল চৌধুরী
তাকে বলা যায় আমাদের দেশের ‘আল পাচিনো’। যার যেকোনো অভিনয় দেখে দর্শক কখনও মুগ্ধতা ছাড়া বিরক্ত হননি। তিনি চঞ্চল চৌধুরী। অভিনয় সত্তাটা যিনি লালন করেছেন ভীষণ সততার সাথে। একইসঙ্গে টিভি নাটক, টিভিসিতে শীর্ষ জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। আর চলচ্চিত্রে দেখিয়েছেন কী করে নিজেকে ভাঙা যায় একের পর এক। বলিউডে আমির খানকে পারফেকশনিস্ট বলা হলে এদেশে চঞ্চলই একমাত্র সেই উপাধির মানুষ। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে চঞ্চল অভিনীত গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘পাপ পুণ্য’ ছবিটি। নতুন এই ছবিটিসহ ইন্ডাস্ট্রির নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বললেন ইত্তফাকের সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন এ এম রুবেল
সম্প্রতি আপনার ‘পাপ পুণ্য’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?
সিনেমাটির উদ্বোধনী শোতে আমি উপস্থিত ছিলাম। পরবর্তীতে যারা সিনেমাটি দেখেছেন তাদের সঙ্গে সরাসরি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলে খুবই ভালো রিভিউ পাচ্ছি।
‘মনপুরা’র পর ‘পাপ পুণ্য’ সিনেমায় গিয়াসউদ্দিন সেলিমের সঙ্গে কাজ করলেন। পরিবর্তন কী লক্ষ্য করলেন?
‘মনপুরা’র সময় তো ওটিটি বা অন্য কোনো প্লাটফর্ম ছিল না। তাছাড়া গানগুলোও দারুণ সাড়া ফেলেছিল দর্শকদের মাঝে। সব বয়সী দর্শক হলে গিয়েছিল সেসময়। এখন তো দেশে সিনেমাহল দিনদিন কমছে। করোনাসহ নানা কারণে গত ২-৩ বছরে দর্শকদের হলে আসার প্রবণতাও কমে গেছে। পাশাপাশি এখন নানা মাধ্যমে বিগ বাজেটের সিনেমাগুলো সহজেই দেখতে পাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তারা মনে করছেন ১ মাসের মাঝেই আমাদের সিনেমাটিও ইউটিউব বা ওটিটিতে দেখতে পাবেন। সেই জায়গা থেকে ‘মনপুরা’, ‘আয়নাবাজি’র মতো দর্শক সমাগম হলগুলোতে চোখে পড়ছে না।
সিনেমাটি দেশের বাইরে শতাধিক হলে মুক্তি পেয়েছে। বিষয়টি চঞ্চল চৌধুরীর দৃষ্টিতে কেমন?
‘পাপ পুণ্য’ বাইরের দেশের শতাধিক হলে মুক্তি পেয়েছে এটা অবশ্যই আমাদের সকলের জন্য আনন্দের খবর। কিন্তু বাইরে আমরা হল পেলেও দেশে মাত্র ২০টি হল পাওয়া দুঃখজনক।
এই হলবিমুখতা বা অনলাইন নির্ভরতা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য কতটা ইতিবাচক?
দেখুন, শুধু আমার সিনেমা নিয়ে বলছি না। আমরা বিগ বাজেটে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে ভালো একটি কাজ করি কিন্তু দর্শকদের জন্য। দিনশেষ তারা যদি হলে না আসে তাহলে আমরা কাদের জন্য কষ্ট করব? আমি মনে করি এখানে দর্শকদের দায় রয়েছে। আমাদের যেমন ভালো কাজ করার দায় রয়েছে তেমনি দর্শকদের হলে এসে সিনেমাটি দেখে গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে।
কিন্তু একটি সিনেমা মুক্তির আগে প্রচার-প্রচারণাও তো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাদের দেশে প্রচার-প্রচারণার ঘাটতি বরাবরই রয়েছে। অন্যান্য দেশে সব কলিগ মিলে নানা মাধ্যমে একটি সিনেমার প্রচারণা করে। কিন্তু আমাদের দেশে দু-চারজন ছাড়া বাকিদের মাঝে সেই চর্চা দেখা যায় না। এই দায়িত্বটা ইন্ডাস্ট্রির সবার নিতে হবে।
দীর্ঘ বিরতির পর আপনাকে নতুন সিনেমায় দেখা যায়। এর কারণ কী?
দেখুন, আমি শিল্পের সঙ্গে আজীবন সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া দর্শকদের চঞ্চল চৌধুরীর ওপর একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করে আমি যে সিনেমাগুলো করব সেগুলো মানসম্পন্ন এবং রুচিশীল হবে। সেই আস্থার প্রতিদান এই ছবিতেও দিয়েছি।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী প্রতিটি সিনেমায় নিজেকে ভাঙছেন। এই চর্চাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় কি-না?
এটাকে ঠিক ঝুঁকিপূর্ণ বলবো না, চ্যালেঞ্জ বলবো। এই যে আমি প্রতিটি সিনেমার মাঝে ২-৩ বছর বিরতি দিই সেটা গল্প ও চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য। সেটা মনপুরা, আয়নাবাজি, পাপ পুণ্য সিনেমায় যেমন করেছি তেমনি মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘হাওয়া’ সিনেমায়ও দর্শকরা দেখতে পাবেন।
ওটিটিতেও বেশ কিছু প্রশংসিত কাজ করেছেন। মাধ্যমটির ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তো সবকিছুই পরিবর্তিত হয়। এটাও তেমন সময়ের চাহিদা। বিশ্বে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজের প্রতিযোগিতা বাড়ায় মানম্পন্ন অনেক কাজ হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, ওটিটির কারণে টিভি নাটক ও সিনেমা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টি আসলে তা না। হলের পাশাপাশি ওটিটিতে সিনেমা মুক্তি পাওয়া খারাপ না। এতে বেশি দর্শকদের কাছে কাজটি পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
‘তাকদীর’-এর পর সাওকীর সঙ্গে ‘কারাগার’ সিরিজে কাজ করছেন। সিরিজটি সম্পর্কে জানতে চাই-
শিল্পী হিসেবে এখনই ওয়েব সিরিজটি নিয়ে কিছু বলা নিষেধ আছে। তবে এটুকু বলবো, তাকদীর দেখে দর্শকরা যতটা মুগ্ধ হয়েছে তার ব্যতিক্রম হবে না। তাকদীরের সঙ্গে কারাগারের তুলনা করা যাবে না, কিন্তু তার চেয়ে ভালো গল্প দর্শকরা দেখবেন।
কোন মন্তব্য নেই